Total Pageviews

Tuesday, July 17, 2018

রথযাত্রার তা‌ত্ত্বিক ও আধ্যা‌ত্বিক বিষয় প্রস‌ঙ্গে।

"রথস্থ বামনং দৃষ্টা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।"
অর্থাৎ, রথের উপরে খর্বাকৃতি বামন জগন্নাথকে দর্শন করলে তার পুনর্জন্ম হয় না। তাই রথরজ্জু ধরে রথটানা মহাপুণ্য কর্ম বলে হিন্দু ধর্মে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

শাস্ত্রবাক্য হয়তো মিথ্যা নয়। সত্যিই জগন্নাথ দর্শন পুনর্জন্মচক্র থেকে জীবকে রক্ষা করে। শুধু জানতে হবে যে, "রথ কি?" "বামন" মানেই বা কি? তবে বিষয়টা একটু দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক।
তাই চলুন একটু বেদ উপনিষদের আলোকে ব্যতিক্রমভাবে চিন্তা করি! বাহ্যিক নয় বরং আধ্যাত্মিক! আর যারা এই আধ্যাত্মিকতার ভেতরে প্রবেশ করতে সমর্থ তারাই প্রকৃত তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারেন। আসুন চেষ্টা করে দেখি-
"আত্মানম্ রথিনম্ বিদ্ধি শরীরম্ রথমেব তু।
বুদ্ধিম্ তু সারথিম্ বিদ্ধি মনঃ প্রগ্রহমেবচ॥
ইন্দ্রিয়ানি হয়ানাহুর্বিষয়াম্স্তেষু গোচরান।
আত্মেন্দ্রিয়মনোয়োক্তম্ ভোক্তেত্যাহুর্মনীষিনঃ॥"
(কাঠোপনিষদ ১/৩/৩-৪)

ভাবার্থ- আমাদের প্রত্যেকের শরীর হল রথ আর বামন জগন্নাথ (আত্মা ও পরমাত্মা) হল সেই রথের স্বামী, আমাদের মন হল লাগাম, ঘোড়াগুলি হল ইন্দ্রিয়, এবং মনীষীগণ(যোগীপুরুষ-আমরা) বুদ্ধিরুপী সারথির নিয়ন্ত্রনে মন ও ইন্দ্রিয়কে বশীভূত করে (বিষয়রুপী) জীবন পথে পরিচালনা করে পরমাত্মামুখী যাত্রা(শুদ্ধজ্ঞানের দ্বারা কর্ম) করে উনার আশ্রয় লাভ করে(ঈশ্বরপ্রাপ্তি)।
আমরা যে রথ স্থুল দৃষ্টিতে দেখি, জ্ঞানীরা আধ্যাত্মিকভাবে তার মধ্যেই আত্মদর্শন করে ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হোন।
জীব যদি আত্মদর্শনের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরদর্শন প্রাপ্ত করে, তবে পুনর্জন্ম হবে কিভাবে?
এটাই হল রথযাত্রার আধ্যাত্মিক মোটিভ(অন্তত আমার কাছে)।

তাই তো বেদে বলা আছে-
"যং দেবাসোহবথ বাজসাতৌ যং শূরসাতা মরুতো হি তে ধন।
ত্রাতযাবাণমং রথমিন্দ্রসানসিম রিষ্যন্তমারুহে মা স্বস্তয়ে।।"
ঋগবেদ ১০/৬৩/১৪

বঙ্গানুবাদ- হে উজ্জ্বল দিব্য ধনের অধিকারী বিদ্যান পুরুষ! অন্ন, বল ও হিতকর ধনাদি লাভের জন্য ঈশ্বর লাভের সাধন যে রথকে তোমরা রক্ষা কর সেই সুগঠিত রথে কল্যাণের জন্য আমরা আরোহন করি।
(ভাবার্থ- বিদ্বান পুরুষের নাম মরুত এবং শরীরের নাম রথ। এই রথ শুধু অন্ন, বল, ও ধন লাভেরই সহায়ক নয়- ইহা ঈশ্বর লাভেরও সহায়ক। নীরোগ শরীর রূপী রথকে ব্রাহ্মমুহূর্তে জড়িয়া সন্ধ্যোপাসনায় লাগাইবে।)

শরীররূপী প্রকৃত রথকে চিনুন, আর সেই রথের ভেতরে বিদ্যমান রথি (জগতের নাথ জগন্নাথকে) চিনুন, চিনতে পারলে ও তাকে জানতে পারলেই জীবন সার্থক। তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে চাই-
"রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম,
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে ‘আমি দেব’, রথ ভাবে ‘আমি’,
মূর্তি ভাবে ‘আমি দেব’—হাসে অন্তর্যামী।"

তাই শেষ করার পূর্বে উপনিষদকারের ভাষায় বলতে চাই-
"উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বারণন্ নিবোধত।
ক্ষুরস্য ধারা নিশিতা দুরত্যয়া
দুর্গং পথস্তৎ কবয়ো বদন্তি।।"
কঠ উপনিষদ ১/৩/১৪.

সরলার্থ- উঠ, জাগো, শ্রেষ্ঠ আচার্যগণের নিকট গিয়ে তত্ত্ব (সত্য তত্ত্ব) অবগত হও। মেধাবিগণ বলেন যে, ক্ষুরের তীক্ষ্ণীকৃত অগ্রভাগ যেমন দুর্গম, উক্ত পথও সেইরূপ দুর্গম।
প্রতিনিয়ত সকলের রথযাত্রা শুভ হোক, কল্যাণময় হোক, শান্তিময় হোক, আনন্দময় হোক।
#‌লি‌খে‌ছেন~রাজন আর্য।

No comments:

Post a Comment